২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:৩৬:২৫ পূর্বাহ্ন


`আগ্নেয়গিরির উপরে বসে আছে সরকার '
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২২
`আগ্নেয়গিরির উপরে বসে আছে সরকার ' বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম


দেশ’কে মোহাম্মদ শাহআলম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল এবং কঠিন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সে বাংলাদেশ নাই। আমরা চেয়েছিলাম শোষনমুক্ত,ধর্মনিরপেক্ষ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বাংলাদেশ। সেটাতো অসম্ভব হয়ে গেলো। রাষ্ট্রটা এখন নিপীড়নমুল হয়ে গেছে। তবে আমিতো মনে করি এ সরকার আগ্নেয়গিরির চুলার ওপর বসে আছে। 

সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহ আলম আরো বলেন, বর্তমানে চলছে গণতন্ত্রহীনতার রাজনীতি। দেশে উত্তরাধিকার রাজনীতি আর ডেমোক্রেসি সাংঘর্ষিক। দুই দলেই উত্তরাধিকারী রাজনীতি প্রধান বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। উত্তরাধিকারী রাজনীতির কারণে দলের মধ্যে এমনকি সংসদেও গণতন্ত্রের কোনো প্রতিফলন নেই। একদিকে এই অক্টোপাসের মধ্যেই পড়ে গেছি। অন্য দিকে লুটোরা আমলা,ব্যবসায়ী,রাজনীতিবিদ এবং সোস্যাল ক্যাপিটাল-এই পাচ চক্র বাংলাদেশের রাজনীতি সমাজ অর্থনীতিসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এই জায়গায় আমাদের দেশ পড়ে গেছে। আরেকটি কথা যা বর্তমান শাসকগোষ্টী বলে থাক্ েতা হলো উন্নয়ণ চান না গণতন্ত্র? আমরা বলি উন্নয়ণ ও গণতন্ত্র পরস্পরের পরিপূরক। দুটি একসাথে কাজ করলেই টেকসই উন্নয়ন হয়। সে জায়গা থেকে আমাদের দেশটা যোজন যোজন চলছে। এখানে পুজিবাদের নামে আদি পুজি সঞ্চয় হচ্ছে। মানুষ এখানে অসহায়। দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তা হলো জবলেস ডেভেলাপমেন্ট। 

এমন পরিস্থতির জন্য কি আপনারা দায়ি না? দেশের বামদলগুলি যেভাবেই দেখেন সব ধরণের আন্দোলন সংগ্রামে তারা একটি বিশেষ ভুমিকা রেখেছিল অতীতে। সে হিসাবে এমন পরিস্থিতি উন্নয়নে আপনাদের দায়িত্ব কি পাশ কাটাতে পারবেন? এখানে কি বামদলগুলির একাটা ব্যার্থতা নেই?

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, বামদের দুর্বলতা নেই তা আমি বলবো না। বাম রাজনৈতিক দলগুলির কাজেই মানুষ বারবার এসেছে। সেই যাটের দশকেও এসেছে।  কিন্তু বামদের মধ্যে রাজনৈতিক পদ্ধতি ও পদক্ষেপের ব্যাপারে সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে এবং ছিল। এছাড়া নানান ধরণের বিভক্তি আগে ছিলই। তাছাড়া সংর্কীর্নতাও বাম রাজনীতির মধ্যে একটা প্রধান সমস্যা। আছে এবং ছিল। যেমন দলীয় এবং ব্যক্তি সংকীর্নতা ছিল এবং আছে। তাছাড়া সমাজ বিশ্লেষনে পার্থক্য ঘাটতি। মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে মুল্যায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি,পার্থক্যতো ছিল এবং আছে। আরেকটা হলো বামপন্থীরা নিজেদের কাধে ভরসা রাখা। অন্যদের ওপর না। লেজুরবৃত্তিও না। এমন যেই করুক।  এই জায়গাটাকে বামপন্থীরা ডিটারমিন করতে পারেন্?ি বিশেষ করে নেতৃত্বে জায়গাটায়। এটা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও দেখা গেছে। যেমন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনটা যদি শ্রেণী ঊধ্ব হয়ে যায়? বামপন্থীরা যদি শ্রেণী উর্ধ্ব রাজনীতিতে জড়িয়ে যায় তাহলেতো হয় না। বামপন্থ’ী রাজনীতি হয়ে গেছিল সেখানেই এবং হচ্ছে। এটা কিন্তু শ্রেণী সংকীর্নতা না। এতে যেটা দেখা গেছে সব লড়াইয়ে বামপন্থীরা ছিল। কিন্তু ফসল নিয়ে গেছে অন্যরা। নিজস্ব ভরকেন্দ্র না করে বৃহত্তর ঐক্যে চলে যাবে তখন কো-রিলেশন ফোর্স এর কাছে। এটাতো বিদ্যমান আছে বাংলাদেশে। এমন পরিস্থতিতে সামাজিক রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্যটা আপনার হাতে থাকে না কিন্তু। এজন্য একটা ভরকেন্দ্র করা দরকার। এর ওপর বেসিস করে গণতন্ত্রের লড়াই করা দরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক ধারা বিরাজ করছে সেখানে গণতন্ত্র প্রকৃত গণতন্ত্রের মতো চলবে তাতো অসম্ভব।  

এমন অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় কি? আপনি তি আশাবাদি?

অবশ্যই আশাবাদি। আমাদের এখানে লড়াই হচ্ছে শতকরা ৯৫ ভাগ বনাম পাচ ভাগ। এই ৯৫ মানুষের স্বার্থের লড়াইয়ে আমাদের দাড়াতে হবে। শ্রমিক কৃষক শ্রেণী পেশার মানুষের স্বার্থে আন্দোলন বাড়াতে হবে। এদের ট্রেড ইউনিয়ন,ধর্মঘটের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে হবে। এটাও কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে করতে হবে। এবিষয়গুলি এখন আমরা চাচ্ছি। এটাকে সামনে নিয়েই আমরা আমাদের সামনে যে কংগ্রেস আছে তা নিয়ে এগুচ্ছি। কারণ এখন কন্ট্রাডিকশান এভরি হোয়ার। পন্যের দামের ক্ষেত্রে। মজুরির ক্ষেত্রে। এখানেতা মাল্টি ডাইমেনশনাল কন্ট্রাডিকশান। বহুমুখি কন্ট্রাডিকশান যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় তাহলে গণতন্ত্র অবমুক্ত হবে। 

বর্তমানে যে অবস্থা চলছে বলে আপনারা বলে থাকেন তার বিরুদ্ধে জনগণের অবস্থানতো নেই বললে চলে। জনগণ কি এমন ভাবছে সব আমলইতো দেখলাম। নতুন যে আসবে বা আনা হবে তারাও কি এর চেয়ে ভালো হবে? মন্দের ভালো হিসাবে কি তারা এসরকারকে আকড়ে আছে? আপনার অভিমত কি?

না মন্দের ভালো হিসাবে জনগণ এঅবস্থাকে আকড়ে ধরে নেই। দেশ ভালো চলছে মানুষ কিন্তু তা বলছে না। মানুষ ভয়ের মধ্যে থাকছে। মিছিলে যোগ দিয়ে আবার কোন বিপদে পড়ি? মানুষ আসলে অতীত বতর্মান দেখেছে। কিন্তু বিকল্প পাচ্ছে না। আবার তারা আমাদের ভালোবাসে,বলে ভলো মানুষ।  কিন্তু ভরসা বা আস্থা রাখতে পারছে না,যে একটা বিকল্প শক্তি হতে পারি তা এদেশের মানুষের মধ্যে ক্রিয়াশীল না। তাই নানা মুখী আন্দোলনে মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে আমাদের আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে হবে। 

কিন্তু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মানুষতো ঝাপিয়ে পড়েছিল। এখন কোনো হচ্ছে না। পরিস্থিতিকে জনগণ এসরকারকে খারাপ মনে করলেতো অনেক আন্দোলন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তো। আপনার অভিমত কি?

মোহাম্মদ শাহ বলেন, এশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে জনগণ একটা নেতৃত্ব দেখেছিল। ১৫দল বা সাত দল য্-াই বলি। একটা লিডারশিপ ছিল। আর এখন দেশে যে অর্থনৈতিক ব্যবন্থা চলছে তখন এটা তৃণমুলে এখনকার মতো শক্ত অবস্থায় জেকে বসেনি। এতো পাওয়ার হাউজ হয়নি। লুটেরা আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সোস্যাল ক্যাপিটাল-এই চক্র বাংলাদেশের তৃণমুল পর্যায়ে রাজনীতি সমাজ অর্থনীতিসহ সব কিছু আগে তো এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। এখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। রাষ্ট্রটা এখন নিপীড়নমুল হয়ে গেছে। আয়ুউব খানের আমলেও ছিল না। এরশাদ পিড়িয়ডেও না।এখানে বর্তমানে একটা উত্তরাধিকার রাজনীতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কথা বলে একটা ব্লেসিং নেয়া হচ্ছে।  তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ হিসাবে তৈরি করে রাখা হয়েছে সমাজে। অন্যদিকে একটি ব্যবস্থা আছে। যারা আমলা,ব্যবসায়ী,রাজনীতিবিদ এবং সোস্যাল ক্যাপিটাল-চক্র। তারাই বলে বেড়াচ্ছে আমরাতো ভালো আছি। তবে হতাশার কিছু নেই। হা সময় একটু লাগছে। এরশাদওতো নয় বছর ধরে শাসন করেছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও জোয়ারভাটা ছিল। ইতিহাসেও এমন জোয়ার ভাটা দেখা গেছে। কোনো সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকে। এটার অর্থ এই নয় যে সব নির্জীব হয়ে গেছে। 

এখন বলেন দেশে একটি এক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক শোনা যাচ্ছে। বিএনপি একটি ঐকবদ্ধ আন্দোলনে ডাক দিয়েছে। তাহলে ধরে নেয়া যায় দেশে একটি ঐকবদ্ধ আন্দোলন হতে যাচ্ছে?

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, বিএনপি টার্গেটতো পাওয়ার। সে-ওতো ডেমোক্রসি চায় না। আমরাতো ডেমোক্রিসির লড়াই চাই। শোষনমুক্তির লড়াই চাই। বিএনপি’তো পাওঢার পলিটিক্্র এর মধ্যেই আছে। আমলা,ব্যবসায়ী,রাজনীতিবিদ এবং সোস্যাল ক্যাপিটাল-এই চক্রের মধ্যে আছে। তারাতো প্রতিক্রিয়াশিল চরিত্রদের নিয়েই আছে। বিএনপি জামায়াতকে কি ছেড়েছিল ড.কামাল হোসেনের কথায়? তারাতো জামায়াতকে ত্যাগ করতে চায় না। আর বর্তমান সরকারে সাথেও তাদের খুব একটা অমিল নেই। নীতিগতভাবে তো কোনো বিরোধীদল নেই। দেশের মানুষ একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক ফোর্স চায়। তারা কিন্তু তা পাচ্ছে না। আমরা চাই বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এটা ঠিক দল হিসাবে এটা হয়তো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু মানুষ এমন শক্তি চায়। এখানে প্রকৃত গণতন্ত্র,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি। এমনটা চায় জনগণের একটা বিরাট উপস্থিতি আছে। তারা চায় না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ব্যবসা। এখানে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী যারা আছে তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে নিয়ে ঘুরে। একজন হাইজ্যাকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সব ধররণের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে।এতে মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর চেতনাও বির্বণ হয়। তবে জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক শক্তি খুশি হয়। আমরা বামরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের চেস্টা করছি। এদেশের মানুষের শ্রেনীমুক্তির লড়াই করছি। 

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সর্ম্পকে আপনাদের অভিমত কি?

এটা তো তাদের গেম প্ল্যাান। তারাতো সৌদি যুবরাজকে নিষিদ্ধ করে না। তারা দ্বিচারিতায় আছে। সব সময়ই তারা তা করেছে। গোটা দুনিয়ায় তারা এটা করছে। আবার এটা ঠিক না যে আমি নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের অপকর্মকে সমর্থণও করছি । আসলেতো মার্কিনীরা এখানে আমাদের টোটালি গেইম প্লানিংয়ের মধ্যে আছে। আমরা কাউকে ক্ষমতায় আনা বা কাউকে ক্ষমতায় রাখার বাহন হিসাবে কাজ করবে না সিপিবি। সিপিবি সমাজ পরিবর্তন ও গণতন্ত্রের জন্য লেফট ডেমোক্রেসি ফোর্স হিসাবে কাজ করবে। 

শেয়ার করুন